Followers

Sunday, 7 January 2018

স্মৃতির বাগান

দূর্গাপুরের এম এ এম সি টাউনশিপের অন্তর্গত বি-ওয়ান ১০৭/২ কোয়ার্টারের ছড়ানো বাগানে তখন অবাধ বিচরণ করা যেত। আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারার গাছেরা ছিল বন্ধু গাছ। শত্রু গাছ ও ছিল, - বাসক পাতার গাছ - ঘনঘন ঠাণ্ডা লাগার কারণে গিলতে হত তেতো পাঁচন। উপরোনোর চেষ্টা চলেছিল পুরোদমে - কিন্তু ছোট ছোট হাতের জোর কে সে অবজ্ঞা করে বেড়ে চলছিল।শীতকালে কিছু মরশুমি ফুলের দল আসত পরিযায়ী পাখিদের মত। আর পাখী - নাঃ শালিখ ছাড়া আর কিছু মন দিয়ে খোঁজা হয়নি তখন।

একদিন সেই বাগানে এক অশীতিপর বৃদ্ধ মালী - সন্তোষ কাকুর আবির্ভাব হল। বাগানটাই বেবাক বদলে গেল। সজনে গাছের ওই পারে আলু, পালং শাক, মেথি শাক বোনা শুরু হল, বেগুন, টমেটো ও কাঁচালঙ্কাও লাগানো হল। কিন্তু সেই ক্ষেতের আলের ওপর দিয়ে হাঁটতে ভয় করত - কি জানি কোন শাকটার ব্যাথা লেগে যায়। বাগান টা ছিল সন্তোষ কাকুর প্রাণ। সারাদিন খাটতে পারতেন আর বেলা পড়ে এলে দিতেন গাছের সারের হদিশ। বাবা মা যখন ওঁর সাথে একসাথে চা খেতে খেতে ওঁর সাথে গাছ নিয়ে আড্ডা মারতেন আর সময় পেলেই ওঁর সাথে গাছের পরিচর্যা করতে লেগে যেতেন, খুব মজা হত - শ্রেণীসমতার সেই প্রথম পাঠ - হাতেকলমে। ...

বাবা মায়ের ষ্টীলের চায়ের কাপের ধূমায়িত চায়ের কোন ভাগ ছিল না, ভাগ ছিল টায়ের চানাচুর ও মুড়িমাখায়। আর, আর ভাগ ছিল গল্পের, আলোচনায়। অধিকার ছিল মতামত দেওয়ার ও শোনার। আধ ঘণ্টার চা পানে হঠাৎ বড় হয়ে যাবার একটা আকর্ষন।

চা পানেরও অধিকার যখন পাওয়া গেল, তখন বদলে গেল বাসস্থান। আরেকটা কোয়ার্টার, - সি ডি ১১১/১। মা চেয়েছিল বাগান করার বিস্তর যায়গা আর আলো হাওয়ার অবাধ যাতায়াত, তাই বাছা হল এই কোয়ার্টার। তাও পুরোনো কোয়ার্টারের মায়া কাটানো গেল না। নতুন বাসস্থানের বাগানে ছিল কাঁকর, বালি ও সিমেন্টের অবশেষ। কেউ বা কারা যেন বেছে বেছে এই যায়গাটাতেই সিমেণ্টের মশলা তৈরি করত, তারা আসার আগে। অশীতিপর সন্তোষ কাকু তখন নবতিপর। হাতের জোর কমে গেলেও মনে কঠিন সঙ্কল্প, - বাগানটিকে আবার মনের মত করে তুলবেন। মনের মত বাগানে যখন ফুল ও সবজি ফলতে শুরু করলো, তিনি বাগানের মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে।

আরও আরও পরে সেই বাগান আর বাগান থাকে না। অনেককাল পরে যখন যাওয়া হল তখন সেই বাগানে আগাছার বন। গবাদি পশুদের নন্দনকানন। সেই বাড়ির বাসিন্দারা সেই ছোট্ট শহরের স্মৃতি বুকে জমিয়ে রেখে বড় শহরে পাড়ি দিয়েছিল অনেকবছর আগে - আরও বড় হওয়ার তাগিদে। তারা বড় হয়েও শিকড় জমিয়ে রাখল সেই  ১০৭/২ তেই। আরও বড় বাগান, আরও বড় বপুর ১১১/১ তাদের মন জয় করতে পারেনি, পারবেও না কোনদিন। তবে ১১১/১ রেখে দেবে তাদের বড় হবার স্বপ্নদের, আশাদের, আকাঙ্খাদের।


1 comment:

  1. Your writing touched my heart. Are the B1 quarters now abandoned and in ruins or do people still live there?

    ReplyDelete