নতুন বাবা মায়েদের বোধহয় হুজুগ একটু বেশি মাত্রাতেই বিরাজমান। সেই হুজুগের পালে হাওয়া দিয়ে আমরা ছ' জন নতুন বাবা মা, প্রায় সদ্যজাত, কয়েক মাসের বাচ্চাদেরকে ট্যাঁকে গুঁজে চলে গেছিলাম তাজপুরে, সপ্তাহান্তের ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
ট্রেনে দীঘা, তারপরে গাড়িতে তাজপুর। এই পুরো রাস্তায় খাওয়ানো ও ঘুমোনোর সময়টুকু ছাড়া, বাচ্চাগুলো অবাক চোখে ট্রেনের জানালা দিয়ে পারিপার্শ্বিক ধাবমান দৃশ্যাবলি ও ট্রেনের ভেতরের সহযাত্রীদের শুধু দেখেই গেছে। মাঝে মাঝে তারা এতটাই অবাক হয়ে যাচ্ছিল যে খাওয়া ও ঘুমের জন্য যে কান্নাকাটি না করলে তাদের চলে না সেটাও ভুলে যাচ্ছিল। যাইহোক, এই অবাক যাত্রা যখন রিসর্টের সামনে গাড়ি থেকে নেমে শেষ হল, তারা তখন শ্রান্তিতে ঢুলে পড়েছে আমাদের কোলে।
ঘর বুঝে নিয়ে, মালপত্র কোনমতে রেখে, আমরা বাচ্চাদেরকে কোলে করে নিয়ে ছুটলাম সমুদ্রদর্শনে, রিসর্টের সবচেয়ে কাছের বালুকাবেলায়। মেঠো পথে কিছু নাম না জানা ফুলের গাছে কিছু নাম না জানা পাখির ডাক শুনতে শুনতে এগোচ্ছি, এমন সময়, সামনে দেখি একটা শীর্ণ নালা। শীর্ণ হলেও শুষ্ক নয়, তিরতির করে লোনা জল বয়ে চলেছে সেখান দিয়ে। একটা ছোট্ট লাফে নালা পার করার সময় মনে হল যেন ছোটবেলার বৃষ্টির জলে ঝাঁপানোর মুহুর্তটাকে একটুখানি ছুঁয়ে এলাম। এগিয়ে যেতেই ঢেউয়ের মৃদু গর্জন কানে এল। আরও এগোতেই বিশাল পারাবার। ঘোলাটে জলের মস্ত ঢেউগুলো একের পর এক আছড়ে পড়ছিল বালিতে এসে। সাধারণত, তাজপুরে অথবা দীঘায় ঢেউয়েরা খুব একটা বড় থাকে না, কিন্তু এবারে গিয়ে দেখলাম ঢেউদের আকার প্রকার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়ত পুর্ণিমার দিন জোয়ার আসার সময় গেছিলাম বলে। নির্জন সৈকতটিতে সেই পড়ন্ত বিকেলে ছয়জন পূর্ণ ও তিনজন সাড়ে মানুষ ঢেউদের সাক্ষাতে নিজেদেরকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেছিল বললেও খুব একটা ভূল বলা হবে না। এবার ছোট্ট সাক্ষাতের পর রিসর্টে ফেরার পালা। আবার সেই মেঠো পথ। এবার অবশ্য কিছু গরু বাছুরদেরকে ঘাস খেতে দেখা গেল। সেই সাড়ে তিনজন মানুষদের এই সু্যোগে 'হাম্বা'দের চিনিয়ে দেওয়া গেল। রিসর্টে ফিরে চা ও চিকেন পকোড়া সহযোগে আড্ডা মারতে বসলাম আমরা। এই আড্ডা যে একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলেছে, তা বলতে পারি না। মাঝেমধ্যেই বাচ্চাদের খাওয়ানো, ঘোরানো ও প্রাকৃতিক কৃত্য পরিষ্কার করা এসব কাজও চলেছে পাশাপাশি। তা সত্ত্বেও কোথাও আড্ডার সুরতাল কেটে যায়নি কারণ আমরা যে যেখানে আড্ডা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম, ফিরে এসে আবার সেখান থেকেই শুরু করছিলাম আড্ডা দেওয়া। আড্ডা দিতে দিতেই বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় খাবার জল ফুটিয়ে যার যার ফ্লাস্কে ভরে নিলাম। এরপর ভাত, ডাল, আলুভাজা, রুটি, পম্ফ্রেট মাছ ভাজা ও পারশের ঝাল দিয়ে নৈশাহারের পালা সাঙ্গ করে যে যার রুমে ফিরে এলাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজে এল, ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন, চা ও জলখাবার পর্ব মিটিয়েই চললাম সাগর অভিমুখে। অপেক্ষাকৃত ভীড় যেই সৈকতে, সেইদিকেই টোটো করে চললাম। গতকাল শুধু চোখের দেখা হয়েছে, আজ সেই সাড়ে তিনজনের সাগর ছুঁয়ে দেখার পালা। দুজন সাড়ে টুকটুক করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোলো তাদের বাবা মায়েদের হাত ধরে, আরেকজন সাড়ে অবশ্য বাবার কোলে চড়ে পা ডুবিয়েই তার মায়ের কোলে ফিরে এল। যখন ঢেউ এসে তাদের পা ভিজিয়ে দিয়েই আবার ফিরে যাচ্ছিল, সেই ঢেউ হয়ত ফিরে যাবার সময় সেই সাড়ে তিনজনের তিন জোড়া চোখের বিস্ময় দেখে যেতে পারছিল না। বাকিরা দেখছিলাম, মন ভরে। পা ছোঁয়ানো পর্ব শেষ করে ডাবে চুমুক দিলাম আমরা বড়রা আর কুট্টিরা তাদের দুধের বোতলে। ঢেউদের আসা যাওয়া দেখতে দেখতে পানীয়য় চুমুক দেওয়া যে বড় মনোরম একটি অভিজ্ঞতা, সেই সাড়ে তিনজন এই বয়সেই তা বুঝে ফেলেছে! ডাবে শেষ চুমুক দিয়েই বাবারা সমুদ্রস্নান সমাপনে গেল। আমরা মায়েরা সন্তানদের কোলে করে নিয়ে সেই সাগরস্নান দেখতে বসলাম। আমরাও অবশ্য যেতে পারতাম, কেউ মানা করেনি, কিন্তু, নিজের উত্তরাধিকারদের কোলে বসিয়ে সমুদ্রশোভা দেখার মধ্যে যে অপরিসীম আনন্দ আছে, যে স্বর্গীয় প্রাপ্তি আছে তা একমাত্র মা ছাড়া কেউ বোঝে না, কোনদিন বুঝবেও না। স্নানপর্ব সাড়া হলে আমরা আবার ফিরলাম, রিসর্টে। সেখানে আমাদের জন্য কাঁকড়া অপেক্ষা করছিল, মধ্যাহ্নভোজনে। দুপুরটা বিশ্রাম নিয়ে আবার যখন সাগরের কাছে ফিরলাম তখন অন্ধকার হয়ে আসছে, হাওয়া একদমই নেই তার ফলে বেশ গরম। এরকম একটা আবহাওয়া কোন সমুদ্রসৈকতে একেবারেই বেমানান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম আমরা, আশায় ছিলাম যে হাওয়া দেবে, একটু অস্বস্তিটা কমবে, কিন্তু তা হল না। বিফল মনোরথে আবার রিসর্টের দিকে ফিরলাম। হালকা খাবার খেয়ে যে যার ঘরে শুতে চলে গেলাম।
তার পরেরদিন উঠেই মহাশোরগোলে শুরু করে দেওয়া হল ফেরার ব্যবস্থা, গোছগাছ, জল ফোটানো, বোতল ফোটানো ইত্যাদি। বাচ্চারাও হয়ত বুঝতে পারছিল যে তারা আর এখানে থাকবে না, ফলে, দফায় দফায় কান্নাকাটি, বায়না, করতে শুরু করেছিল। ওদের ভোলানোর জন্য আমরা নানারকম চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু, আমাদের, নিজেদের কি মন ভুলছিল? ভ্রমণশেষের বিষাদ কি আমাদের মনকে একবারের জন্যেও ভারাক্রান্ত করছিল না? কিন্তু, সেটাই যে নিয়ম, কালের নিয়মে আমাদেরও বাড়ি ফিরে যেতে হবে, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে হবে ও অপেক্ষা করতে হবে পরেরবারের ভ্রমণের জন্য। ফেরার পথেও আবার বিস্ময়ের পালা। অবাক করা ধাবমান দৃশ্যপট দেখতে দেখতে শ্রান্তিতে চোখ বুজে আসছিল সেই সাড়ে তিনজনের সাথে বাকি সবারই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত গোধুলীবেলার মন কেমন করা আলোর মানে বুঝতে পারেনি এত ছোট বয়সে কিন্তু আমরা যে ওদের জন্য একটা অচেনা দিগন্তের উন্মোচন করে দিলাম ভ্রমণের মাধ্যমে তা হয়ত ওদের দেখার চোখ পালটে দিতে পারে, ভবিষ্যতে, কে বলতে পারে?
পুনশ্চঃ
১) আমরা শেষবেলায় যেই রিসর্টে রুম ফাঁকা পেয়েছি সেটাতেই বুকিং করেছি। তাজপুরে সব রিসর্টই মোটের উপর ভাল, তাই যেটা পছন্দ, সেটাই বুক করতে পারেন।
২) ছোট বাচ্চাদের সাথে নিয়ে গেলে অবশ্যই ইলেক্ট্রিক কেটলি নিয়ে যাবেন সাথে করে।
৩) ঘুরতে গিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় জোর একেবারেই করবেন না। যেহেতু ওরা নতুন জিনিস দেখছে, ওদের কিন্তু ওইদিকেই আগ্রহ থাকছে, তার ফলে, তাদের খাবার ইচ্ছে নাও থাকতে পারে। মনে রাখবেন, ঘুরতে গিয়ে ওজন কমুক চাই বাড়ুক, ওদের অভিজ্ঞতা তো বাড়ছে, তাই আমাদেরও উচিৎ ওদের পাশে থাকা।
৪) অনেকেই ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যেতে চান না, ভাবেন যে মুশকিলে পড়বেন। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভূল। বাচ্চারা ঘুরতে ভালবাসে ও তারা সব পরিস্থিতিতেই কিন্তু মানিয়ে নিতে পারে, হয়ত, কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের বড়দের চেয়েও বেশি ভালভাবে পারে।
ট্রেনে দীঘা, তারপরে গাড়িতে তাজপুর। এই পুরো রাস্তায় খাওয়ানো ও ঘুমোনোর সময়টুকু ছাড়া, বাচ্চাগুলো অবাক চোখে ট্রেনের জানালা দিয়ে পারিপার্শ্বিক ধাবমান দৃশ্যাবলি ও ট্রেনের ভেতরের সহযাত্রীদের শুধু দেখেই গেছে। মাঝে মাঝে তারা এতটাই অবাক হয়ে যাচ্ছিল যে খাওয়া ও ঘুমের জন্য যে কান্নাকাটি না করলে তাদের চলে না সেটাও ভুলে যাচ্ছিল। যাইহোক, এই অবাক যাত্রা যখন রিসর্টের সামনে গাড়ি থেকে নেমে শেষ হল, তারা তখন শ্রান্তিতে ঢুলে পড়েছে আমাদের কোলে।
ঘর বুঝে নিয়ে, মালপত্র কোনমতে রেখে, আমরা বাচ্চাদেরকে কোলে করে নিয়ে ছুটলাম সমুদ্রদর্শনে, রিসর্টের সবচেয়ে কাছের বালুকাবেলায়। মেঠো পথে কিছু নাম না জানা ফুলের গাছে কিছু নাম না জানা পাখির ডাক শুনতে শুনতে এগোচ্ছি, এমন সময়, সামনে দেখি একটা শীর্ণ নালা। শীর্ণ হলেও শুষ্ক নয়, তিরতির করে লোনা জল বয়ে চলেছে সেখান দিয়ে। একটা ছোট্ট লাফে নালা পার করার সময় মনে হল যেন ছোটবেলার বৃষ্টির জলে ঝাঁপানোর মুহুর্তটাকে একটুখানি ছুঁয়ে এলাম। এগিয়ে যেতেই ঢেউয়ের মৃদু গর্জন কানে এল। আরও এগোতেই বিশাল পারাবার। ঘোলাটে জলের মস্ত ঢেউগুলো একের পর এক আছড়ে পড়ছিল বালিতে এসে। সাধারণত, তাজপুরে অথবা দীঘায় ঢেউয়েরা খুব একটা বড় থাকে না, কিন্তু এবারে গিয়ে দেখলাম ঢেউদের আকার প্রকার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়ত পুর্ণিমার দিন জোয়ার আসার সময় গেছিলাম বলে। নির্জন সৈকতটিতে সেই পড়ন্ত বিকেলে ছয়জন পূর্ণ ও তিনজন সাড়ে মানুষ ঢেউদের সাক্ষাতে নিজেদেরকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেছিল বললেও খুব একটা ভূল বলা হবে না। এবার ছোট্ট সাক্ষাতের পর রিসর্টে ফেরার পালা। আবার সেই মেঠো পথ। এবার অবশ্য কিছু গরু বাছুরদেরকে ঘাস খেতে দেখা গেল। সেই সাড়ে তিনজন মানুষদের এই সু্যোগে 'হাম্বা'দের চিনিয়ে দেওয়া গেল। রিসর্টে ফিরে চা ও চিকেন পকোড়া সহযোগে আড্ডা মারতে বসলাম আমরা। এই আড্ডা যে একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলেছে, তা বলতে পারি না। মাঝেমধ্যেই বাচ্চাদের খাওয়ানো, ঘোরানো ও প্রাকৃতিক কৃত্য পরিষ্কার করা এসব কাজও চলেছে পাশাপাশি। তা সত্ত্বেও কোথাও আড্ডার সুরতাল কেটে যায়নি কারণ আমরা যে যেখানে আড্ডা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম, ফিরে এসে আবার সেখান থেকেই শুরু করছিলাম আড্ডা দেওয়া। আড্ডা দিতে দিতেই বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় খাবার জল ফুটিয়ে যার যার ফ্লাস্কে ভরে নিলাম। এরপর ভাত, ডাল, আলুভাজা, রুটি, পম্ফ্রেট মাছ ভাজা ও পারশের ঝাল দিয়ে নৈশাহারের পালা সাঙ্গ করে যে যার রুমে ফিরে এলাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজে এল, ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন, চা ও জলখাবার পর্ব মিটিয়েই চললাম সাগর অভিমুখে। অপেক্ষাকৃত ভীড় যেই সৈকতে, সেইদিকেই টোটো করে চললাম। গতকাল শুধু চোখের দেখা হয়েছে, আজ সেই সাড়ে তিনজনের সাগর ছুঁয়ে দেখার পালা। দুজন সাড়ে টুকটুক করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোলো তাদের বাবা মায়েদের হাত ধরে, আরেকজন সাড়ে অবশ্য বাবার কোলে চড়ে পা ডুবিয়েই তার মায়ের কোলে ফিরে এল। যখন ঢেউ এসে তাদের পা ভিজিয়ে দিয়েই আবার ফিরে যাচ্ছিল, সেই ঢেউ হয়ত ফিরে যাবার সময় সেই সাড়ে তিনজনের তিন জোড়া চোখের বিস্ময় দেখে যেতে পারছিল না। বাকিরা দেখছিলাম, মন ভরে। পা ছোঁয়ানো পর্ব শেষ করে ডাবে চুমুক দিলাম আমরা বড়রা আর কুট্টিরা তাদের দুধের বোতলে। ঢেউদের আসা যাওয়া দেখতে দেখতে পানীয়য় চুমুক দেওয়া যে বড় মনোরম একটি অভিজ্ঞতা, সেই সাড়ে তিনজন এই বয়সেই তা বুঝে ফেলেছে! ডাবে শেষ চুমুক দিয়েই বাবারা সমুদ্রস্নান সমাপনে গেল। আমরা মায়েরা সন্তানদের কোলে করে নিয়ে সেই সাগরস্নান দেখতে বসলাম। আমরাও অবশ্য যেতে পারতাম, কেউ মানা করেনি, কিন্তু, নিজের উত্তরাধিকারদের কোলে বসিয়ে সমুদ্রশোভা দেখার মধ্যে যে অপরিসীম আনন্দ আছে, যে স্বর্গীয় প্রাপ্তি আছে তা একমাত্র মা ছাড়া কেউ বোঝে না, কোনদিন বুঝবেও না। স্নানপর্ব সাড়া হলে আমরা আবার ফিরলাম, রিসর্টে। সেখানে আমাদের জন্য কাঁকড়া অপেক্ষা করছিল, মধ্যাহ্নভোজনে। দুপুরটা বিশ্রাম নিয়ে আবার যখন সাগরের কাছে ফিরলাম তখন অন্ধকার হয়ে আসছে, হাওয়া একদমই নেই তার ফলে বেশ গরম। এরকম একটা আবহাওয়া কোন সমুদ্রসৈকতে একেবারেই বেমানান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম আমরা, আশায় ছিলাম যে হাওয়া দেবে, একটু অস্বস্তিটা কমবে, কিন্তু তা হল না। বিফল মনোরথে আবার রিসর্টের দিকে ফিরলাম। হালকা খাবার খেয়ে যে যার ঘরে শুতে চলে গেলাম।
তার পরেরদিন উঠেই মহাশোরগোলে শুরু করে দেওয়া হল ফেরার ব্যবস্থা, গোছগাছ, জল ফোটানো, বোতল ফোটানো ইত্যাদি। বাচ্চারাও হয়ত বুঝতে পারছিল যে তারা আর এখানে থাকবে না, ফলে, দফায় দফায় কান্নাকাটি, বায়না, করতে শুরু করেছিল। ওদের ভোলানোর জন্য আমরা নানারকম চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু, আমাদের, নিজেদের কি মন ভুলছিল? ভ্রমণশেষের বিষাদ কি আমাদের মনকে একবারের জন্যেও ভারাক্রান্ত করছিল না? কিন্তু, সেটাই যে নিয়ম, কালের নিয়মে আমাদেরও বাড়ি ফিরে যেতে হবে, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে হবে ও অপেক্ষা করতে হবে পরেরবারের ভ্রমণের জন্য। ফেরার পথেও আবার বিস্ময়ের পালা। অবাক করা ধাবমান দৃশ্যপট দেখতে দেখতে শ্রান্তিতে চোখ বুজে আসছিল সেই সাড়ে তিনজনের সাথে বাকি সবারই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত গোধুলীবেলার মন কেমন করা আলোর মানে বুঝতে পারেনি এত ছোট বয়সে কিন্তু আমরা যে ওদের জন্য একটা অচেনা দিগন্তের উন্মোচন করে দিলাম ভ্রমণের মাধ্যমে তা হয়ত ওদের দেখার চোখ পালটে দিতে পারে, ভবিষ্যতে, কে বলতে পারে?
পুনশ্চঃ
১) আমরা শেষবেলায় যেই রিসর্টে রুম ফাঁকা পেয়েছি সেটাতেই বুকিং করেছি। তাজপুরে সব রিসর্টই মোটের উপর ভাল, তাই যেটা পছন্দ, সেটাই বুক করতে পারেন।
২) ছোট বাচ্চাদের সাথে নিয়ে গেলে অবশ্যই ইলেক্ট্রিক কেটলি নিয়ে যাবেন সাথে করে।
৩) ঘুরতে গিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় জোর একেবারেই করবেন না। যেহেতু ওরা নতুন জিনিস দেখছে, ওদের কিন্তু ওইদিকেই আগ্রহ থাকছে, তার ফলে, তাদের খাবার ইচ্ছে নাও থাকতে পারে। মনে রাখবেন, ঘুরতে গিয়ে ওজন কমুক চাই বাড়ুক, ওদের অভিজ্ঞতা তো বাড়ছে, তাই আমাদেরও উচিৎ ওদের পাশে থাকা।
৪) অনেকেই ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যেতে চান না, ভাবেন যে মুশকিলে পড়বেন। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভূল। বাচ্চারা ঘুরতে ভালবাসে ও তারা সব পরিস্থিতিতেই কিন্তু মানিয়ে নিতে পারে, হয়ত, কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের বড়দের চেয়েও বেশি ভালভাবে পারে।
No comments:
Post a Comment