Followers

Monday 6 November 2017

বয়স তখন চার পেরিয়েছে কি পেরোয়নি। একদিন সকালে যোগীন্দ্রনাথ সরকার এর 'হাসিখুশি' পড়ছি, হঠাৎ মা এসে আমাকে 'আনন্দমেলা' পত্রিকাটি হাতে দিয়ে বললেন "পড় দেখি। পড়তে অসুবিধে হলে বলিস।" আমার মনে তখন যুদ্ধজয়ের আনন্দ। মনে হচ্ছিল যেন আচমকা বড় হয়ে গেলাম। মনে হওয়ার কারণ ও ছিল। 'আনন্দমেলা' বাড়িতে এলেই প্রথমে দাদা পড়ত, তারপর মা ও বাবা, আর আমি শুধু প্রচ্ছদ এর ছবি দেখতাম পড়তে পারতাম না বলে। স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ পরিচয় সম্পুর্ণ হতেই 'হাসিখুসি' ও 'আনন্দমেলা' য় উত্তরণ যখন ঘটল তখনও কিন্তু আমি যুক্তাক্ষর পড়তে পারি না, যেখানে আটকায়, বাবা, মা বা দাদা কে দেখিয়ে নি। গল্প পড়ার আকর্ষণে তখন কোন বাধাই বাধা নয়। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনো শুরু করি। সব বই ইংরেজি তে লেখা। মন টা হাঁফিয়ে উঠত। বাংলা বিষয়ের পাঠ্যবই টা নিয়ে পড়ে যেতাম টানা। বাড়িতে ইংরেজি বলা নিষিদ্ধ ছিল মায়ের আদেশে। বাবা যদিও বা নিজে ইংরেজি বই পড়তেন, আমাদের খুব একটা উৎসাহ দিতেন না ইংরেজি পড়তে, বলতেন, "সেই ত পড়বি ই, বাংলা গল্পের বই গুলো আরো মজার।" ক্রমে বড় হলাম। বাংলার শিশুসাহিত্য ও কিশোরসাহিত্যের সব বই ই মোটামুটি পড়া হয়ে গেছে এরকম অবস্থায় পড়তে শুরু করলাম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর 'দূর্গেশনন্দিনী'। সত্যি বলতে কি, কোন রসাস্বাদন করতে পারলাম না। হয়ত, আমার ই বিফলতা। ফিরে গেলাম রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছে, নাটকে, ও উপন্যাসে। পড়লাম আরও অনেক প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের অবিস্মরণীয় সব সৃষ্টি। ইংরেজি গল্পের বইও হাতে এল, পড়লাম। পড়তে পড়তে বুঝলাম কেন এতদিন ইংরেজি বই আমাদের কাছে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল। আমাদের অভিভাবকরা ভেবেছিলেন যে আমাদের সাহিত্যানুরাগী করে তুলতে গেলে মাতৃভাষাকে সম্মান করতে শেখাতে হবে। নিজের ভাষাকে ভাল না বাসলে অন্য ভাষাকে ভালবাসা যায় না। বলা বাহুল্য, তাঁরা তাঁদের ভাবনায় সঠিক ছিলেন।
ইদানিং, আমি ইংরেজিতে লিখি। ইংরেজি তে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু বাংলা না জানলে আমি ইংরেজিকেও ভালবাসতে পারতাম না। তবে আজও, বাংলা ও ইংরেজি তে লেখা পাশাপাশি দুটো বই থাকলে বেছে নি বাংলায় লেখা বইটিই। বাংলা ভাষায় লেখা গল্প, উপন্যাস ও রম্যরচনায় পাই মাতৃস্নেহের পরশ।

No comments:

Post a Comment